টাংগাইলের শাড়ী
আখতার বানু (শেফালী)
শহর থেকে গাঁয়ের পথে যাচ্ছি যখন ভ্যানে,
মনের কথা ছড়িয়ে দিলাম কবিতা আর গানে।
আমার শহর পাড় হলেই বাজিত পুরের হাট
কতো শতো নক্সী শাড়ী আলোয় ভরা মাঠ।
কতো লোকের আনাগোনা সেই হাটের বুকে,
কেনা কাটার ধূম চলেছে বলছে কথা সুখে।
টাংগাইলের তাঁতের শাড়ীর নাম সবারই জানা
সেই জন্য সবার এতো হাটে আনা গোনা।
একটু দূরেই পাথরাইল, শাড়ী বোনার গাঁও,
সারা ক্ষনই মাকুর আওয়াজ শুনতে তুমি পাও।
কি আনন্দ আর ব্যস্ততা সবার ঘরে ঘরে,
গেলে তুমি ফিরবে না আর সে সব দেখার পরে।
আমার গাঁয়ের তাঁতের শাড়ীর নাম যে শুনে নাই
তার সাথে আড়ি আমার, কথা কোনোই নাই।
মীর পুরের বেনারসী পল্লীর দোকান যে ঝলমল করে,
টাংগাইলের তাঁতের শাড়ীতে তার রুপ কতো বাড়ে
পাথরাইলের শাড়ীর দোকান জ্বলছে সোনার মতো,
জরীর পাড়, বালু চুড়ি শাড়ী দেখতে ভালো কতো।
তারপরেতে হাত বাড়ালেই আমার সোনার গাঁ
পথিক তুমি থমকে যাবে, চলবে না আর পা।
কেউ ফেরে না
আখতার বানু (শেফালী)
কুয়াশা মাখা এক শরতের ভোরে
আমি একা বসে আছি দোল চেয়ারে।
চারিদিকে পাখির কিচির মিচির,
টুপটাপ ঝরে পড়ে ভোরের শিশির।
হঠাৎ যেনো দখিনের দুয়ার ঠেলে,
আমার দ্বারে তুমি এলে, দেখতে আমায় কেমন
আছি তোমায় বিনে।
আমি ভিষণ চমকে গিয়ে শুধাই তোমায়,
কোথায় ছিলে? কেনো গেলে? কেমনে এলে?
ঠোটের পরে আঙুল চেপে বললে যেনো চুপ চুপ ,চুপ,
বলেই যেনো মিলিয়ে গেলে।
একা আমি বসে থাকি দোল চেয়ারে,
কতো স্মৃতি ভেসে উঠে চোখের পরে।
কোন এক চৈত্র দিনের নিঝুম দুপুর
কেউ পাশে নেই,
ঝিঁঝিঁরা বাজিয়ে চলে ঘুমের নূপুর।
পূবের ঘরের বারান্দাটার চৌকিটাতে
হাতের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছি একলা আমি,
কোথায়ও কাছে উদাস সুরে
চলছে ডেকে বিরহী এক ঘুঘু পাখী।
সেই ডাকেতে আমার প্রান করছে হুহু,
হঠাৎ তুমি কোথা হতে বসলে এসে
আমার পাশে।
ধরফড়িয়ে উঠে বসে ব্যাকুল স্বরে শুধাই তোমায়,
কোথায় ছিলে? এতোদিনে আমার কথা পড়লো মনে?
ঠোটের পরে আঙুল চেপে বললে যেনো
চুপ চুপ চুপ বলেই কোথায় মিলিয়ে গেলে।
জলে ভরা আঁখি, আমি বসে থাকি
দুরে কোথায়ও চোখ গেলো চোখ গেলো বলে কেঁদে ফিরে পাখি।
বাইরে শ্রাবণ ধারা অবিরাম ঝর ঝর ঝরে
সেই শ্রাবণের ধারার সাথে,আমার চোখের
ধারা মিলে,বালিশ ভিজে কোন এক শ্রাবণ রাতে,
তোমার কথা স্মরণ করে,
হঠাৎ পাশে কার নিঃশ্বাসে চমকে উঠে
খুঁজে বেড়াই,কোথায় তুমি?কখন এলে?
বললে কোথায়ও যাইনি আমি,পাশেই আছি
বলেই কোথায় মিলিয়ে গেলে।
আমি উঠে আলো জ্বালাই, হাতড়ে বেড়াই,
কে যে বলে ভূল সবি, কেউ আসে না,
যে যায় সে যায়,সে কভু আর ফেরে না।
বাইরে শ্রাবণ ধারা ঝর ঝর ঝরে,
একা আমি জেগে থাকি চোখ জলে ভরে।
ছন্নছাড়া
আখতার বানু (শেফালী)
পড়তে আমার ভাল্লাগে না মাগো,
আমায় কেন ঘরের কোণো বন্দী করে রাখো?
দাওনা ছুটি একটু খানি আমায়,
বাইরে কোকিল কুহু কুহু,ডাকছে শোনো মুহু মুহু,
ওদের সাথে ওমন করে ডালের ফাঁকে লুকিয়ে
মাগো ডাকতে আমি চাই, যাই মা আমি যাই?
ওমা ঘরের বাইরে এসো আকাশ পানে একটু তাকাও
দেখো মা শরতকালের আকাশ কতো নীল,
সেই আকাশে সোনারোদ করছে যে ঝিল মিল,
বলো মা এমন দিনে যায় কি ঘরে থাকা?
নিজেকে ঘরের কোণে যায় কি বেঁধে রাখা?
ওই শোনো মা বাতাসেতে হারিয়ে যাওয়ার ডাক এসেছে
গন্ধ মদির এই প্লাবনে মাগো আমি
হারিয়ে যেতে চাই, যাই মা আমি যাই?
জানো মাগো বাইরে এখন শরৎ কালের কতো ছবি?
ফুল ফুটেছে জানো কতো?
তাদের রুপে পাগল কতো ভ্রমর জানো?
রং বেরংগের প্রজাপতি,ফড়িং কতো উড়ে দূর্বাদলে
তাদের পিছে সারাটি দিন ছুটতে আমি চাই,
যাই মা আমি যাই?
নদীর ধারে কাঁশের বনে ফুল ফুটেছে কতো?
বাতাসেতে দুলছে কেমন দুধ সাদা তার বাহার
তুমি মাগো চোখটি মেলে রুপটি যদি দেখতে কভু তাহার
সেই কাঁশের বনে মাগো আমি হারিয়ে যেতে চাই,
যাই মা আমি যাই?
বিলে ঝিলে ফুটছে মাগো,কতো, নীল্ পদ্ম, লাল পদ্ম
শাপলা শতোদল,
এক সাঁতারে আনবো তুলে গা্থবো মালা, পরবো গলে
মাগো এসব ইচ্ছে আমার নয়তো কোনো ছল।
মাগো ওই যে এক ঝাঁক বৃষ্টি আসে দস্যি মেয়ের মতো
হুড়মুড়িয়ে সব ভিজিয়ে দৌঁড়ে চলে যায়,
ঐ বৃষ্টিতে ভিজে মাগো মাঠ পেরিয়ে, ঘাট পেরিয়ে
খাল বিল নদ সব পেরিয়ে দৌড়ে যাবো ওদের সাথে
অন্য কোনো গাঁয়।
নীল আকাশে দেখছো মাগো দুধসাদা মেঘেরা কেমন দৌড়ে উড়ে যায়,
ওদের সাথে পাল্লা দিয়ে খোলা মাঠে দৌড়াতে মা চাই,
যাই মা আমি যাই?
আকাশের ঐ অন্ত নীলে,দিনের শেষে
পাখিরা সব ডানা মেলে যায় যে মিশে
ওমনি মাগো ওদের সাথ আকাশের ঐ অন্তনীলে
মিলিয়ে যেতে চাই, যাই মা আমি যাই?
শিউলী তলা ভরে আছেু, শিউলী ফুলে ছেয়ে
কুড়িয়ে সে ফুল গাঁথবো মালা, পড়বো আমি গলে
আমি হবো মাগো তোমার ফুল কুড়ানী মেয়ে।
সবার কি আর হয় মা পড়া? কেউ কেউ হয় ছন্নছাড়া,
আমি না হয় হই মা তোমার লক্ষীছাড়া,ছন্নছাড়া মেয়ে।