টাঙ্গাইল জেলাস্থ ঘাটাইল থানাধীন ১০ নং রসুলপুর ইউনিয়নের মোমিনপুর ও রসুলপুর এর মধ্যস্থ্য সংযোগ সড়কের পাশে ধলী বিল ও আঠারোচূড়া বিলের সংযোগ খালের মধ্যে পাকা দেয়াল তুলে দিয়েছেন জমির মালিক। ধলী বিলের সাথে আঠারোচূড়া বিলের সংযোগ ৩ কি:মি: দৈর্ঘ্যের খালের জন্য ইতিমধ্যে সরকার একটি প্রজেক্ট হাতে নেয়। খাল খনন প্রায় শেষের দিকে ছিল। সরকারের এই মহতী উদ্যোগে এলাকাবাসী সন্তুষ্টি প্রকাশ করছিল। সফলভাবে খাল থনন শেষ হলে ধলী বিল ও তার আশাপাশের আবাদি জমিতে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি মাছ চাষেও দৃশ্যমান উন্নয়ন পরিলক্ষিত হতো।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অংশীদার হতে পেরে এই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্তগণ বলেন “কাজটি প্রায় শেষের দিকে। মাঝখানে মাত্র একটি দেয়ালের কারনে সরকারের কয়েক কোটি টাকার কাজ মুখ থুবরে পড়েছে। সরকারের প্রকল্পটি বন্ধ করার মাধ্যমে সরকারের উন্নয়নে বাধাগ্রস্থ করাই মূলত পেছনে কলকাঠি নাড়া লোকদের উদ্দেশ্য।”
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ধলি বিলে প্রায় ১৫০০ একর জমি রয়েছে যার সাথে যুক্ত রয়েছে কয়েকশত পরিবার। খালের মুখে পাকা দেয়াল করে বাঁধ দেয়ায় কোন ক্রমেই পানি বের হতে পারছে না, যার কারনে বিলে এবার ফসল উৎপাদন কোন ক্রমেই সম্ভব হচ্ছে না আর এই দেয়াল যদি খালের মুখে থাকে তবে ভবিষ্যতেও আর কখনো এই বিলের জমিতে আর কখনো কৃষকেরা ফসল ফলাতে পারবে না। সরকারের কোটি টাকার প্রকল্প-ও ভেস্তে যাচ্ছে।
মূলত তিন কি:মি দৈর্ঘ্য ও দেড় কি:মি প্রশস্ত ধলি বিলের দক্ষিণ প্রান্ত এই খাল পাড়ের নিকট এসে শেষ হয় এবং সরু খালের মাধ্যমে পানি চলাচল করে। বিলের দক্ষিণপ্রান্তের শেষ ভাগ থেকে ১৫-১৮ ফুট খাল এর মাধ্যমে পানি গিয়ে আঠারোচূড়া বিলের মাধ্যমে বংশাই নদীতে পতিত হয়। সরু খালটি খননের মাধ্যমে ধলী বিলের মাছের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষকদের ফসল উৎপাদনে সহযোগিতা করাই ছিল সরকারের লক্ষ্য। বিলে দুই পাড়ের অসংখ্য মানুষ ভরা মৌসুমে এই বিল থেকে মৎস উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করে।
খাল ও বিলের সংযোগ মুখের জায়গাটার মালিক রসুলপুর গ্রামের প্রতাপশালী শ্রী নিচেন সরকার। এলাকাবাসী তাকে নিরীহ লোক বলেই জানতো। তার জমি খাল ও বিলের সংযোগ মুখে থাকায় তিনি নিজ জমিতে বিলের জমির মালিকদের বিপদগ্রস্থ্য করতে এবং সমস্ত বিলের জমি অনাবাদি করতে অপ্রয়োজনে অযৌক্তিকভাবে ইটের দেয়াল গড়ায় এলাকাবাসী রীতিমত বিস্মিত হোন।
চেয়ারম্যান সাহেব নীচেন সরকারের অপ্রয়োজনীয় ইটের দেয়াল উচ্ছেদের চেষ্টা করলে বাধাপ্রাপ্ত হোন। তিনি অনুরোধ করলেও তার কথায় বিন্দুমাত্রও কর্ণপাত করেননি শ্রী নিচেন সরকার। খাল খনন কাজ অসমাপ্ত রাখতে বাধ্য হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এমতাবস্থায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র উৎকণ্ঠা বিরাজমান।
ধলী বিলে উৎপাদিত হাজার হাজার টন উৎপাদিত ধান এলাকাবাসীর চাহিদা মিটিয়ে গারোবাজার, ধলাপাড়া ও চাপড়ীবাজার ছাড়াও আশেপাশের বড় বড় বাজারে বিক্রি হয়। মধুপুর ও ঘাটাইলের চাল কলে এখান থেকে প্রতিবছর কয়েকশত টন ধান যায়। মূলত হাজার হাজার পরিবারের খাবারের যোগানদাতা ধলি বিলকে নিষ্ক্রিয় করতে শ্রী নিচেন সরকার (৫৮), মোঃ রফিকুল ইসলাম (৪৪), পিতাঃ মৃত আঃ মান্নান, মোঃ শিপন (৩৭), পিতাঃ মোঃ ঠান্ডু মিয়া মিলে তাদের খালের মুখের জমিতে বাঁধ নির্মাণ করে। যার কারনে বিলের পানি নদীতে আসা যাওয়া করা কোন ক্রমেই সম্ভব হচ্ছে না।
রসুলপুর ইউনিয়নের ফসল উৎপাদনের সবচেয়ে বড় মাঠ এটি। যেখান থেকে পুরো রসুলপুর ইউনিয়নের অধিংকাশ মানুষের খাবারের ধান উৎপাদিত হয়। এই বীলের আবাদি জমি নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যমে সরকারের উন্নয়নে বাধাগ্রস্থ্য করাই স্বার্থান্বেষী মহলের উদ্দেশ্য।
এলাকাবাসী জানায় রসুলপুর গ্রামের বালুচর নামক স্থানে বসবাসকারী ২নং ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সেন্টু খা এই এই বাঁধ নির্মানের মূল হোতা। তিনি ধলী বিলকে নিষ্ক্রিয় করতে এবং সরকারের খাল খনন কাজ সফলভাবে শেষ করতে না দিতেই নীচেন সরকারের জমি ব্যবহার করে বাঁধ নির্মান করেছেন। সেন্টু খার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী সুদের ব্যবসা পরিচালনা, গ্যাং তৈরি, মাদক সহ নানা ধরনের অপরাধের অভিযোগ আনেন। সেন্টু খা এর ছোট ভাই আলমগীর খা ২৫০০০ ইয়াবার চালান নিয়ে সরাসরি পুলিশের হাতে চট্টগ্রামে ধৃত হয়। সে বর্তমানে জামিনে বেরিয়েছে। আলমগীর খা এর পূর্বে সাগরভাটায় এক নারীকে ধর্ষনের অভিযোগে জেলে যান, ১ বছর জেলে থাকার পর জামিন হয়। প্রতাপশালী সেন্টু খা পূর্বের চেয়েও ক্রমান্বয়ে ভয়ানক হয়ে উঠেছে।
এলাকাবাসী বলেন সেন্টু খা ও তার পরিবার প্রকৃতপক্ষে জামাআতপন্থী কিন্তু তারা আওয়ামীলীগ এর তকমা গায়ে মেখে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে সবসময় বাধাদান করে আসছে।