তুমি যখন নিজেকে বিশুদ্ধ বলো
তখন আমার শরীরের
আনাচেকানাচে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি
কোথাও রজনীগন্ধা ফুটেছে কীনা!
ঐক্য অথবা অর্পিতারও ফুটেছে হয়তো!
আচ্ছা, তুমি কী জানো
অর্পণ শব্দের প্রকৃত অর্থ কী?
কী ডিকশনারী খুলে বসেছো ?
দরকার নেই !
তুমি আমাকে যতটুকু জানো
নীলিমার নীলও তা জানে না,
আর আমার অর্পণ শুধু তোমাতেই ছিলো
বিশ্বের কারো নেই আর দাবি করবার ক্ষমতা !
একবার এক ব্রম্মচারী বলেছিলো ,
তুই উজানের বিলে যাবি ?
বলেছিলাম বৈঠা ধরবার
সাধ্যি আমার নেই !
জানো কাল তসলিমা নাসরিনের
একটি কবিতা আবৃতি শুনেছি
রুদ্রকে লেখা ,
রুদ্র তসলিমাকে সকাল বলে ডাকতো,
তোমাদের ভাষায়
সেই অসভ্য নারীর একটি কবিতা
আমাকে তার ফ্যান করে দিলো !
কতটা বিশুদ্ধ সেই কবিতা
তুমি একবার শুনে দেখো অরুণ !
কতটা নির্মল ভালোবাসার ডালি নিয়ে
কতটা আবেগ, কতটা অভিমান,
কতটা ঘৃণা সেই কবিতায় মিশে আছে,
অরুণ, একবার মাত্র তুমি শুনে দেখো
সেই কবিতা ।
অরুণ, অসংখ্য নারীকে যদি তুমি
বেশ্যা বলে আখ্যায়িত করতে পারো,
তবে ঐ অসংখ্য নারীকে তুমি
চিনেছো নিশ্চয়?
যে দ্রোহে আমি পুড়ি,
তুমি তার থেকে
সহস্রাধিক দ্রোহে পোড়ো অবলিলায় !
অরুণ, এই হাতে
কুদাল চালাতে শিখেছে যেমন
তেমনি এই হাত কলম ধরতেও জানে,
হয়তো তোমাদের কায়দায় নয় ।
কিন্তু ধরেছে সে কলম !
যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তুমি
ঐক্যতানে মিছিল করো
আঁধারে ইনবক্সে অর্পিতার কাছে
আত্মসমর্পণ করো
সেখানে দাঁড়িয়ে
তোমার অরুণা অপেক্ষা করে
কবে তুমি ঐ মিথ্যে শ্লোগান থেকে
ফিরে এসে বলবে,
আমিও পুরুষ, বেশ্যা ছিলাম !
বেশ্যার বিপরীত শব্দটা
আমি জানিনা ,
আমার বিনিত অনুরোধ রইলো
অরুণ, তুমি আবারও হত্যা করো না
কোনো
জীবনের স্পন্দণ !
পুরুষ বেশ্যারা তাহলে
তোমার কাছে বড় ছোট হয়ে যাবে আজ !
অরুণ, নারী বলে, কোমল হৃদয় বলে,
তুমি কতবার সীতাকে অগ্নিশুদ্ধ করবে ?
কতবার দ্বিধা হবে ধরণী ?
তোমাকে দিনের পর দিন পুষেছি
পুষেছি সমাজের শৃঙ্খলা ভেঙ্গে,
নত জানু হয়ে তোমার সম্মুখে
আমি সহস্রবার পুজার ডালি নিয়ে
বসেছি !
কৃপা নয়, কৃপা নয়
একটুখানি আশির্বাদের জন্য!
তোমাকে দেবতা নয়,
মানুষ হিসাবে দেখবার জন্য
আর ততবারই তুমি আমার সম্মুখে
পুরুষ বেশ্যা হয়ে গেছো !
আমি বন্ধন চেয়েছি ভালবাসার,
আর তুমি মুক্তি চেয়েছো
শুদ্ধতার কাছ থেকে
বন্দনা করেছো নষ্টামির !
নেলি খালা, শিউলিরা যখন
তসলিমাকে কাঁদিয়েছিলো
কোথায় ছিলো তোমাদের শুদ্ধতা ?
কোথায় ছিলো তোমাদের ধর্মীয় পবিত্রতা ?
তোমরাতো রুদ্রকেই চেয়েছো,
নির্বাসিত করেছো
এক হতভাগিণী তসলিমাকে !
তসলিমার শব্দ চয়ন
আমারও ভালো লাগেনা,
কিন্তু তসলিমার মুখে
তুলে দিয়েছিলে যে শব্দবীর্য,
সেতো তোমাদের মতো পুরুষ বেশ্যারা !
আমি চিৎকার করে যতই বলি,
অগ্নি শুদ্ধ আমি,
আমি তোমাকে শুদ্ধতা দিতে চাই
তুমি বিশ্বাস করবে না !
তুমি নিজে অন্যের হাত ধরে ,
অন্যের বুকের উপর
উলঙ্গ শরীর তুলে
বাহবা নিবে,
অথচ আমাকে তুমি ভালোবাসার
স্বাধীনতা টুকূও দেবেনা,
আমাকে তোমাকে শুদ্ধ করবার
ইচ্ছেটুকুও কেড়ে নিবে !
বলো তাই কী সত্য ?
আমার আমি শুধু
তোমার তুমিত্বে একাকার হতে
যতটুকু কেন্নোর মত গোটানো যায়
ততখানি গুটিয়েছি,
অথচ তুমি ?
সামান্য কয়েকটি নারীর
সঙ্গ লাভের ইচ্ছেটুকু নষ্ট করতে পারোনি !
তাহলে আমি একবার নষ্ট হলে,
তুমি হয়েছে শতাধিকবার !
আমি মহিলা নষ্টা হলে,
তুমি পুরুষ বেশ্যা বটে বহুবার !
কবি পরিচিতি: কবি নাসিমা খান তার সুদক্ষ লেখনীতে পাঠকের মন জয় করে চলেছেন অবিরত। তিনি তার সুনিপুণ হাতের নিখাদ গাঁথুনিতে তৈরি করে চলেছেন সময়ের সাহসী সব কবিতা। তার লেখা ও সুমধুর শব্দ চয়নে মন্ত্রমুগ্ধ হয় যেন সবাই। কবি এই কবিতাটি সব পুরুষকে উপজীব্য করে লিখেন নি। সমাজের পুরুষ বেশ্যাদের জন্যই তার এই লেখা। চোখে আঙ্গুল দিয়ে স্বরূপ উদঘাটন করার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা।