নিজস্ব সংবাদদাতা: রাজশাহী শহরের প্রানকেন্দ্রের একটি এলাকা সাহেব বাজার। সাহেব বাজার এ সব সময় একটু ভীরবাট্টা লেগেই থাকে। ওই এলাকার প্রভাবশালী মহলের ছায়ায় মদদপুষ্ট বখাটেদের অত্যাচারে সাধারণ মেয়েদের রাস্তায় চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বখাটেরা মেয়েদের গায়ে হাত দেয়া অথবা চলার মতো ভান করে গায়ের সাথে ধাক্কা দেয়া এমনকি বুকের মধ্যে কুনুই মারা এসব যেন নিত্যদিনকার স্বাভাবিক বিষয়।
রুয়েটের মেধাবী শিক্ষক রাশিদুল ইসলাম। তার মেধা ও যোগ্যতার প্রমান রেখে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তিনি গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত হয়েছেন।
তিনি ১০ ই আগষ্ট সস্ত্রীক বেরিয়ে ছিলেন ঐ এলাকায়।
তার স্ত্রীকে দেখে বখাটেরা তাদের জিহ্বা সংবরন করতে পারছিলেন না। তাদের পশুর মতো রূপ বেরিয়ে আসছিল। তারা পিছন থেকে এসে একাধিক বার রাশিদুল ইসলাম এর স্ত্রীর গায়ে ধাক্কা দেয়। কয়েকবার বিব্রত হলেও বিষয়টা তিনি ও তার স্ত্রী এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন কিন্তু বখাটেরা লাগাম ছাড়া হয়ে গেলে তিনি ঘুরে দাঁড়ান, এতেই কাল হয়ে দাঁড়ায়।
স্ত্রীর সম্মান বাঁচাতে গিয়ে বখাটেদের হাতে মার খেতে হলো প্রধানমন্ত্রীর হাতে গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত রুয়েট শিক্ষক রাশিদুল ইসলাম কে।
জননন্দিত, তুখোর মেধাবী শিক্ষক রাশিদুল ইসলাম রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগে নিয়োজিত আছেন।
তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন “ মেনে নিন না হলে দেশ ছেড়ে চলে যান।
এদেশে আপানার চোখের সামনে আপনার মা, বোন অথবা বউ ধর্ষিত হলেও প্রতিবাদ করবেন না, আশেপাশে কাউকে পাবেন না। মার খেয়ে মরবেন।
কারণ আপনি একটা জানোয়ার, আমিও একটা জানোয়ার, জানোয়ারে ভরা সমাজ আমাদের।
আজকের ঘটনাটা সংক্ষেপে বলি।
সাহেববাজার মনিচত্তর এর মত জনবহুল এলাকাতেও আমার বউ হেনস্তার শিকার হয়। এক পাল ছেলের মধ্যে একজন আমার বউ কে পেছন থেকে কয়েকবার ইচ্ছাকৃত ধাক্কা দেয়। দুই-তিনবার সহ্য করলেও পরেরবার প্রতিবাদ করি।
ব্যাস, সোনার ছেলেদের দাপট শুরু। শেষে আমাকে সোনাদীঘি মসজিদের সামনে ৫-৭ মিলে ঘিরে ধরে মারা শুরু করে। এই পর্যন্ত না হয় মেনে নিলাম।
কিন্তু ওখানে কম করে হলেও ৫০ জন আমার মার খাওয়া দেখছিল। একজনও এগিয়ে আসেনি।
মার খাওয়ার এক পর্যায়ে আমি দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলি, ‘বাঁচান আমাকে’, কোন রেসপন্স পাইনি। একজন মোটরসাইকেল থামিয়ে আমার মার খাওয়া দেখছিল, আমি সাহায্য চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে গেল।
মার খেয়ে কাপুরুষ আমি দর্শকদের বলি, আপনারা আজ এগিয়ে এলেন না, একদিন আপনার বউয়ের সঙ্গে এমন হলেও কেউ এগিয়ে আসবে না। ও আমার বউ, গার্লফ্রেন্ড না, কাবীননামা দেখাতে হবে আপনাদের?
এসময় একজন ভিড়ের মধ্য থেকে বলে বসল, হ্যাঁ, কাবীননামা নিয়েই চলাফেরা করতে হবে।
ধরেন, দ্বিতীয়বার আক্রমণে ওরা আমাকে মেরে ফেলল। কি করবেন?
ফেইসবুকে কান্নাকাটি? জাত গেল জাত গেল রব তুলবেন? কোনোটাই করবেন না দয়া করে, এতে কিছু আসে যায় না। আর যারা করবে, তাদের গিয়ে থুথু দিয়ে আসবেন।
ধরেই নিয়েছিলাম, পিএইচডি শেষ করে দেশে ফিরব, মা বাবা চান না বাইরে স্যাটেল হই। এই ঘটনার পর দ্বিতীয়বার ভাবব অবশ্যই।”
এই ঘটনার প্রত্যেক্ষদর্শী যে ব্যক্তি বলতে পারেন কাবিননামা নিয়ে চলতে হবে তিনিও কি তার বিয়ের কাবিন নামা নিয়ে রাস্তায় চলেন? বাংলাদেশের কোন আইনে কি এমন নির্ধারণ করা আছে।
বখাটেরা দিঘীর পারে নিয়ে তাকে উপুর্যপুরী আঘাত করেছে। থানা পুলিশ করে কোন লাভ হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ থাকায় আইনের দ্বারস্থ্য-ও হোননি তিনি।
ফেনবুক পাড়ায় ইতিমধ্যে তার স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পরেছে। ছি: ছি: থু থু এসব যেস স্বাভাবিক নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার।
একজন ফেসবুক একটিভিস্ট বলেন “হয়তো ঐ বখাটেরা বা উৎসাহী সায় দেয়া ঐ মানুষটিও এই ঘটনার ফেসবুকে তীব্র প্রতিবাদ করছে। তীব্র নিন্দ জানাচ্ছে। দেশের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে ভাবতেও শিরদাঁড়া কেঁপে উঠে।