ব্রাহ্মণবাড়িয়া মন্দভাগ রেলষ্টেশনে দুইটি ট্রেনের সংঘর্ষে অন্তত বিশজন নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছে আরও শতাধিক যাত্রী। মঙ্গলবার ভোররাত সোয়া তিনটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা এবং সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেসের মধ্যে এই দুর্ঘটনা ঘটে। রেল ক্রসিংয়ের সময় সিগন্যাল অমান্য করে তুর্ণা এক্সপ্রেস সরাসরি উদয়ন এক্সপ্রেসকে ধাক্কা দিলে এমন ঘটনা ঘটে।
ভোর থেকেই ঢাক-চট্টগ্রাম এবং সিলেট-চট্টগ্রাম রোডে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। খুব দ্রুত রাস্তা চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি বগি ধুমড়ে মুচরে গেছে। ট্রেনে কাটা পরে খন্ড বিখন্ড হয়ে গেছে কয়েকটি দেহ।
তূর্ণা নিশীথার ধাক্কায় উদয়ন এক্সপ্রেসের মাঝের দুইটি বগি একেবারে দুমড়ে মুচড়ে যায়। এসব বগির নীচে কেউ আটকে পড়ে আছে কিনা, তার অনুসন্ধান চলছে। মূলত ক্রসিংয়ের সময় উদয়ন এক্সপ্রেস ধীর গতিতে মন্দভাগ ষ্টেশন ক্রস করার সময় দ্রুত গতিতে চলে এসে তুর্ণা আঘাত হানে।
ভোর থেকেই ফায়ারসার্ভিস উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের দাবী সবাইকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বগীর নীচে কেউ চাপা পরে থাকলেও থাকতে পারে।
বেলা বাড়ার সাথেসাথেই এলাকাবাসীর প্রচন্ড ভীর বাড়তে শুরু করে। উৎসুক জনতা যেমন ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করছে ঠিক তেমনি তাদের উৎসুক দৃষ্টির কারনে কাজেও বিঘ্ন ঘটছে।
জেলা প্রশাসক জানিয়েছে পাশের স্থানীয় প্রি-প্রাইমারী স্কুলে লাশগুলো রাখা হয়েছে। লাশগুলো আত্মীয়দের মধ্যে হস্তান্তর করা শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসণের গাড়ি দিয়ে লাশ পাঠানোর পাশাপাশি প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে দেয়া হচ্ছে বিশ হাজার টাকা। পরবর্তীতে আর-ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।
স্থানীয় ফায়ারসার্ভিস ছাড়াও আখাউরা ও ব্রাহ্মনবাড়িয়ার ফায়ারসার্ভিসের মোট তিনটি ইউনিট উদ্ধার কাজে অংশ নেয়।
সীমানা এলাকা কাছাকাছি হওয়া বিজিবি-ও দ্রুত উদ্ধারকাজে অংশ নেয়। স্থানীয় আনসার বাহিনী ছাড়াও ক্যান্টনম্যান্ট থেকে সেনাবাহিনীদের একটি দল উদ্ধার কাঝে অংশ নেয়। অংশ নিয়েছে পুলিশ সুপারের নের্তৃত্বে পুলিশের একটি দল। ইতিমধ্যে একটি উদ্ধারকারী ট্রেন সেখানে পৌছেছে। দ্রুত ট্রেন চলাচল উপযোগী করতে নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ।
জেলা প্রশাসনের দাবী হয়তেবা সিগন্যাল ভুল বোঝাবুঝির কারনেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে কারন একটি ট্রেন স্টেশন খুব ধীর গতিতে ক্রস করছিল এবং তুর্ণা নিশিথা খুব বেশি গতিতে এসে আঘাত করে। উদয়নের যাত্রীরাই হতাহত হয়।
একজন যাত্রী বলেন “আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, হঠাৎ ঝাঁকুনিতে জেগে যাই। উঠে দেখি এই কান্ড। একটি মেয়ে দ্বি-খন্ডিত হয়ে পড়ে আছে। একজন মহিলা যার দুটি পা শরীর থেকে আলাদা সে পানি চাচ্ছে। আর-ও অসংখ্য খন্ড বিখন্ড দেহ। কারো মাথা আলাদা। কারো মাথা ফেঁটে মগজ বের হয়ে আসছে। আমাদের ট্রেনের কোন ক্ষতি হয়নি। সব এই ট্রেনের ক্ষতিই হইছে। পাশের স্কুলেই লাশ রাখা আছে। নিহতদের ব্রাহ্মবাড়িয়া, কসবা সহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।”
ইতিমধ্যে রেল মন্ত্রী পথে আছেন। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন। দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় জেলাপ্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি করেছেন আরেকটি করেছে রেলপথ মন্ত্রনালয়।
পাশের বাইক হাইস্কুলে লাশগুলো রাখা আছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। পুরিশ সুপার বলেছেন “উদ্ধার সহযোগিতা ছাড়াও পুলিশ সার্বক্ষণিক লাশ পৌছে দেয়ার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। সবোর্পরী পুলিশ সুপার নিজেই উপস্থিত আছেন। ভূক্তভোগীদের পাশেই আছেন তিনি। এমন একটি ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করেন।”
এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারনে সবাই শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। সবাই দু:খ প্রকাশ করছেন। এককথায় কেউ ঠিকমত কথাই বলতে পারছেন না। খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। এমন সময় ঘটনাটি ঘটেছে যখন বেশীরভাগ যাত্রীরাই ছিলেন ঘুমিয়ে।