হৃদয়ে সিরাজগঞ্জ
রূপা জাহান জ্যোৎস্না
——————————
আঁধো আলো আঁধো ছায়া
দিনের মায়া কাটিয়ে
নেমে এসেছে আবছা অন্ধকার,
আকাশ ভারি
যখন তখন বৃষ্টিতে ছেয়ে যাবে!
রাস্তা বেশ ফাঁকা
একটু দূরে পর পর
লাল,নীল,সবুজ বাতি গুলো জ্বলছে,
গাড়ি গুলো হরেণ দিচ্ছে”
পথ খুঁজতে ব্যস্ত সবাই
নীরহারা মানুষ গুলো
বাউল বেশে পিচ ঢালা রাস্তার ধারে-
শুয়ে বসে ইটের কু্ঁচি মুখে দিচ্ছে!
দোতলা ঘর গুলো
শিশুর কলকল হাসিতে মেতে উঠেছে ;
মনুষ্যহীন মানুষ গুলো দেখেও
দেখেনা চোখ মেলে,
বাউল বেশে শুয়ে থাকা মানুষ গুলোকে
হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে দেখছে পৃথিবী!
রাস্তার পাশ বেয়ে বয়ে গেছে
এঁকে বেঁকে যমুনা,
যমুনার অদূর পিঠে রূপ পুর গ্রাম!
ভ্যাবলা স্বভাবী মানুষের বাস
দিন আনে দিন খায়,
ভয় নেই কিছু হারাবার –
তবু যা ছিল খোয়া গেছে “
আছে শুধু মুক্ত ঝরা হাসি!
সবুজ সোনালী ফসলে ভরা মাঠ
চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ছে শিশির
লুকানো ডানা মেলেছে ফড়িং
তবুও যেন ভরছে না মন!
বলি তারে গড়েছে যে জন
কেন হয় এমন?
স্বার্থছাড়া কেউ নয় আপন”
পর আপন হয় প্রয়োজন যখন
আপন হয়না পর করিলে দ্বি-ক্ষন!
বিমর্ষ মূহুর্ত
ছুটে আসছে বৃষ্টি ভেজা বাতাস
জুরিয়ে দিতে হিয়া,
অভিমানী মন তবু ফিরিয়ে দিতে পারিনি,
ইট-বালি দিয়ে গড়া যে জন
সে কি আর আসবে দেখতে আমায়?
এ’যে রাখবে আমায় পাহাড়ায়,
ঘুমিয়ে থাকবো যখন আমি!
যেদিকে যাই ফিরে ফিরে চাই
আর বুঝি দেখতে পাবোনা এই ভেবে”
ভুলো মনা তবু ভুলতে পারিনা,
শত শত রূপের মাঝে খুঁজে ফিরি-
কোথাও নেই সে রূপ
নিশ্চুপ হয়ে যায় মনে পড়ে যখন
হৃদয়ে সিরাজগঞ্জ!
পদ্ম পাতার জল
রূপা জাহান জ্যোৎস্না
———————————–
কতদিন দেখিনা তোমায়,
কত রাত পেরিয়ে গেল
সকাল গড়িয়ে বিকেল হল!
তবু শেষ হলনা
তোমার অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকা!
অপেক্ষারত আশায় বুক বাঁধা,
সেই পথে হাটা
যে পথে হেটে ছিলাম
তুমি আমি দু’জনে!
স্কুলের গণ্ডি পেড়ি,
সাইকেলে করে আসা যাওয়া –
কলেজ ক্যান্টিনে উকি মেরে দেখা!
সন্ধার আলো অন্ধকারে
গাঁয়ের মেঠো পথে
বাদাম চিবতে চিবতে হাটা,
আঙুলের একটু স্পর্শ পাবার
আশায় ছুঁটে আসা অনুভূতি
গুলো আজ বিলুপ্ত প্রায়!
দরজায় এসে কড়া নাড়লেও
আজ আর পৌছায় না
আমার কণ্ঠস্বর তোমার কানে,
মনে কি পড়ে সে রাতের কথা?
খুব কাছে ছিলাম
যে রাতে তুমি আমি দু’জনে!
চিনতে কভু ভুল করিনি
তাইতো সরিয়ে নিয়েছিলাম নিজেকে
তোমার থেকে,
কখনোই চাওনি তুমি আমায়
চেয়েছিলে কেবল আমার আমিত্ব টাকে!
কি করে তোমায় বুঝাবো বলো?
আমার মূল্যই আমিত্বে,
সেই থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে
আর ফিরে তাকালে না!
জানি আর আসবেনা ফিরে,
সময়ের ব্যবধানে
তুমি আমি দুটি প্রান্তের মূল
যা উপরে ফেলতে পারবেনা কেউ!
তবু বড্ড কষ্ট হয়
খুব করে জানতে ইচ্ছে করে
এতো সহজে ভুলে গেলে কি করে আমায়?
আজও বিরাজ করে সেই
অনুভূতি গুলো আমার মাঝে!
স্মৃতির পাতা থেকে
এভাবেই একদিন মুছে যাবে
আমার নাম,
দেয়ালে ঠেঁকে যাবে পিঠ
বন্ধি দেয়াল থেকে বেরুতে পারবেনা
ঘুনেপোঁকা কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে
তখন স্মৃতির পাতা!
চশমার মোটা ফ্রেমে বাঁধানো থাকবে
তখন চোখ জোড়া,
ক্ষণিকের ফেলে আসা আবেগ
উকি দেবে যখন মনে,
আস্তে ধীরে গড়িয়ে পরবে তখন
পদ্ম পাতায় দু’ফোটা জল!
গা ভাসাবো তোমার তরে
রূপা জাহান জ্যোৎস্না
——————————-
এসো মোর হে প্রিয়,
এসেছে বসন্ত আমার শহরে-
ফাগুনে ভরে গেছে মন কানন,
অপেক্ষার প্রহর গুনছে তোমার পরশে ফুটবে বলে!
এসো মোর হে প্রিয়,
জেগেছে শিমুল,পলাশ,কৃষ্ণচূড়া,সন্ধ্যা মালতী!
মেতে উঠেছে মন কানন,
জানান দিচ্ছে বার বার-
আজ বড্ড প্রয়োজন তোমায়!
এসো মোর হে প্রিয়,
গন্ধে মৌ মৌ করছে চারিপাশ-
দু’জনে মিলে কুড়াবো আমের মুকুল!
হাত বাড়াবে এলোচুলে,
শুষে নিতে আমের মুকুলের গন্ধ!
এসো মোর হে প্রিয়,
বিবাগী হয়ে পথ চেয়ে আছি-
কাঁশবনে বরণ ডালা হাতে নিয়ে!
বসিয়ে তোমায় মন মন্দিরে,
বন্দনা করবো তোমার-
দখিনা বাতায়ন খুলে!
এসো মোর হে প্রিয়,
মন কাননে পুরনো গ্লানি মুছে
ফাগুনের রংয়ে রাঙিয়ে নিজেকে-
গা ভাসাবো তোমার তরে
নতুন কিছু সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!